নামাজ নিয়ে উক্তি (Quotes about prayers)

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের উপর নামাজ ফরজ করে বড় একটি নিয়ামত দান করেছেন। লক্ষ কোটি দরুদ ও সালাম পেশ করছি ইমামুল আম্বিয়া, নবী মুহাম্মদ মুস্তফার উপর যার মাধ্যমে আমরা নামাজ পেয়েছি এবং তার সাহাবীদের ও পরিবার পরিজনের উপর যারা নামাজের ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন।

নামাজ নিয়ে  উক্তি (Quotes about prayers)


কিন্তু বর্তমানে মুসলমানরা তাদের আধ্যাত্বিকতা তথা রুহানী শক্তি হারিয়ে ফেলেছে , তাদের অন্তরে শয়তানকে সিংহাসন বানানোর জন্য জায়গা করে দিয়েছে। এখন শয়তান তাদেরকে যে নির্দেশনা দিচ্ছে, মুসলমানরা তাই অনুসরণ করতেছে।

শয়তান অবশ্যই মানুষের প্রকাশ্য শত্রু, সে চায় কিভাবে মানুষকে কিভাবে পথভ্রষ্ট করা যায় এবং  ঈমান দুর্বল করে মুসলমানদের সর্বশ্রেষ্ট খোদা প্রদত্ত নিয়ামত নামাজ থেকে বিরত রাখা যায়। সে কিন্তু তার অভিযানে কামিয়াব হয়ে গেছে।


বর্তমানে গোটা বিশ্বব্যাপী অধিকাংশ মুসলমান নামাজের ব্যাপারে উদাসীন। তারা আল্লাহর আদেশ ভুলে গিয়ে শয়তানকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে। তাদের অন্তর থেকে খোদা ভীতি উঠে গেছে  বলা চলে।

কারণ তারা তো সর্বাদাই শয়তানের আদেশ পালনের  লিপ্ত। বর্তমানে গোটা বিশ্বব্যাপী অধিকাংশ মুসলমান নামাজের ব্যাপারে উদাসীন। অথচ কুরআনে পাকে রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-

নামাজ নিয়ে কুরানের আয়াত

১) সবর ও নামায দ্বারা তােমরা সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই নামায খুব মুশকিল কাজ। কিন্তু ঐসব অনুগত লােকদের জন্য মুশকিল নয়, যারা মনে করে যে, শেষ পর্যন্ত তাদেরকে আপন রবের সাথে দেখা করতেই হবে এবং তারই কাছে ফিরে যেতে হবে। (সূরা বাকারা, ০২ঃ৪৫-৪৬)

২) তােমরা নামাজের হেফাজত কর; বিশেষ করে যে নামাজের মধ্যে নামাজের সব গুণাবলি পাওয়া যায় । আর আল্লাহর সামনে এমনভাবে দাঁড়াও, যেমন অনুগত গােলাম দাঁড়ায়। (সূরা বাকারা-০২ঃ২৩৮)

৩) (হে নবী!) আপনার প্রতি অহির মাধ্যমে যে কিতাব পাঠানাে হয়েছে তা আপনি তিলাওয়াত করুন এবং নামাজ কায়েম করুন। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে। আর আল্লাহর জিকর এর চেয়েও বড় জিনিস । তােমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা জানেন। (সূরা আনকাবুত-২৯ঃ৪৫)

৪. নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও। তােমরা পরকালের জন্য ভালাে যা কিছু কামাই করে পাঠাবে, আল্লাহর কাছে তা মজুদ পাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পৃ – রাখেন যা তােমরা করছ। (সূরা বাকারা-০২ঃ ১১০)।

৫. সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং যারা আমার সামনে নত হয় (রকুকারী) তাদের সাথে তােমরাও নত হও (রুকু কর।) (সূরা। বাকারা-০২ঃ৪৩)।

৬. তারাই ঐ সব লোেক, যাদেরকে যদি আমি পৃথিবীতে ক্ষমতা দিই, তাহলে তারা নামাজ কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, ভালাে কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে। আর সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহরই হাতে। (সূরা হাজ্জ-২২ঃ৪১)

 ৭. তারপর যখন তােমরা নামাজ আদায় করে ফেল তখন দাঁড়ানাে, বসা ও শােয়া (সব) অবস্থায় আল্লাহর জিকির করতে থাক। তারপর যখন (আশঙ্কা দূর হয়ে যায় এবং তােমরা নিশ্চিন্ত হও তখন পুরা নামাজ আদায় কর। আসলে নামাজ এমন এক ফরজ, যা নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করার জন্য মুমিনদের উপর হুকুম করা হয়েছে। (সূরা নিসা -০৪ঃ১০৩).

৮. হে ঈমানদারগণ! যখন তারা নামাজের জন্য উঠে। তারপর আপনার মুখ এবং কনুই পর্যন্ত আপনার হাত ধুয়ে নিন, আপনার মাথা ম্যাসেজ করুন এবং আপনার পা গোড়ালি পর্যন্ত ধুয়ে নিন। যদি আপনি একটি অপরিষ্কার অবস্থায় থাকেন, তাহলে নিজেকে ধুয়ে পরিষ্কার করুন। যদি আপনি অসুস্থ হন বা সফরে থাকেন বা তাদের মধ্যে কেউ পেশাব করতে আসেন বা আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেন এবং আপনি যদি পানি না পান তাহলে পরিষ্কার মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করুন, আল্লাহ তাদের জীবনে কঠোরতা আরোপ করতে চান না। তিনি তাদের শুদ্ধ করতে চান। আর তিনি তোমাদের উপর তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা মায়েদা-০৫ঃ০৬)।

৯. এবং দেখুন, দিনের উভয় দিকে এবং রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করার পরে। নিঃসন্দেহে ভালো কাজ মন্দ কাজগুলোকে প্রতিহত করে। যারা আল্লাহকে স্মরণ করে তাদের জন্য এটি একটি শিক্ষা। (সূরা হুদ ১১ঃ১১৪)

১০. সূর্যাস্ত থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ আদায় কর। আর ফজরের নামাযে কুরআন তিলাওয়াত করো, কেননা ফজরে কুরআন তেলাওয়াতের সময় (ফেরেশতারা) উপস্থিত থাকে। (সূরা বনী ইসরাঈল - ১৭ঃ৭৮।

১১. আপনার পরিবারের সদস্যদের নামায পড়তে আদেশ করুন এবং নিজে তা পালন করুন। আমি তোমার কাছে রিজিক চাই না। বরং রিজিক দিচ্ছি। আর সর্বোত্তম পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য। (সূরা ত্বহা-২০ঃ১৩২)

নামাজ নিয়ে হাদিস (namaj niye hadis)

১. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর স্থাপিত। ১. এই সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল ২. নামাজ কায়েম করা ৩. যাকাত দেয়া ৪, হজ্জ করা এবং ৫, রমজানের রােজা রাখা। (বুখারী, বাবু বুনিয়াল ইসলামু আলা খামছিন,৭. মুসলিম: বাবু বায়ানি আরকানিল ইলামি, ২১)।

২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যার আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই। যার পবিত্রতা নেই তার নামাজ নেই, যার নামাজ নেই তার দ্বীন নেই। গােটা শরীরের মধ্যে। মাথার যে মর্যাদা, দ্বীন ইসলামে নামাজের সে মর্যাদা। (আল আওসাতু লি তাবরানী: মিন ইসমিহী আহমাদ ২৩৮৩, আলবানী হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন।)

৩. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন বান্দাহর আমল পর্যায়ে সর্বপ্রথম তার নামাজ সম্পর্কে হিসেব নেয়া হবে। তার নামাজ যদি যথাযথ প্রমাণিত হয়, তবে সে সাফল্য লাভ করবে, আর যদি নামাজের হিসেবই খারাপ হয় তবে সে ব্যর্থ ও ক্ষত্রিস্ত হবে। যদি তার ফরজ ইবাদাতে কোনরূপ ঘাটতি হয়, তখন আল্লাহ বলবেন, তােমরা দেখ আমরা বান্দাহর কোন নফল ইবাদাত আছে কি

না? যদি থাকে তাহলে উহার দ্বারা ফরজের ঘাটতি পূরুণ করা হবে। অতঃপর তার অন্যান্য আমলও অনুরূপ বিবেচিত হবে। (তিরমিযি, বাবু মা জাআ। আন্না আউয়ালা মা ইউহাসাবু বিহিল আবদু -৩৭৮)।

৪, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) নবী করীম (সা) থেকে বর্ণনা করেন, একদা তিনি নামাজের প্রসংগ নিয়ে আলােচনা করলেন অতঃপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি এই নামাজ যথাযথভাবে ও সঠিক নিয়মে আদায় করতে থাকবে তাদের জন্য কিয়ামতের দিন একটি নুরঅকাট্য দলিল এবং মুক্তি নির্ধারিত হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নামাজ সঠিকভাবে আদায় করবে না, তার জন্য নূর, অকাট্য দলিল এবং মুক্তি কিছুই হবে না বরং কিয়ামতের দিন তার পরিণতি হবে কারুন, ফেরাউন, হামান, উবাই ইবনে খালফের সাথে । (মুসনাদে আহমাদ, মুসনাদে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা), ৬২৮৮)।

৫. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তােমাদের কারাে বাড়ির সামনে যদি একটি প্রবাহমান নদী থাকে এবং সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গােসল করে তাহলে তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে

পারে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, না! তার শরীরে কোন ময়লাই থাকতে পারে না। রাসুল করীম (সা) বললেন, এই হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণ। এর সাহায্যে আল্লাহ তায়ালা যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেন। (মুসলিম: বাবুল মাশয়ি ইলাস সালাতি তুমহা বিহিল খাতায়া, ১০৭১)।

৬. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, নামাজ ঠান্ডার সময় পড়। কেননা গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের শ্বাস থেকেই উৎসারিত। (বুখারী: বাবু ছিফাতিন নারি, ৩০১৯)।

৭. হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় যতবার মসজিদে যাতায়াত করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ততােবার মেহমানদারীর সামগ্রী তৈরি করে রাখেন। (বুখারী : বাৰু ফাদলি মান গাদা ইলাল মাসজিদি ওয়ামান রাহা, ৬২২)।

৮, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের বাড়িতে পবিত্রতা অর্জন করল, অতপর আল্লাহর

কোন একটি ফরজ (নামাজ) আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে রওয়ানা হল এটি তার পদচারণার প্রতি এক কদমে একটি গুনাহ মাফ এবং পরবর্তী কদমে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে। (মুসলিম : বাবুল মাশয়ি ইলাস সালাতি তুমহা বিহিল খাতায়া, ১০৭০)

৯. হযরত বুরাইদা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) বলেছেন, যারা অন্ধকারে মসজিদের দিকে (নামাযের উদ্দেশ্যে) বেশী বেশী পদচারণ করে তাদেরকে কিয়ামতের দিনে পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দিন। (আবু দাউদ: বাবু মা জাআ ফিল মাশয়ি ইলাস সালাতি ফিযলামি, ৪৭৪)।

১০. হযরত আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে দূরে বাস করে লােকদের মধ্যে (দূর থেকে এসে জামাআতে নামায পড়ার কারণে) তারই সাওয়াব বেশী হয়। আর এর চাইতে যে আরাে দূরে থাকে তার সাওয়াব আরাে বেশী হয়। যে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে তার চাইতে ঐ ব্যক্তির সাওয়াব বেশী যে ইমামের সাথে নামাজ পড়ার জন্য অপেক্ষা করে। (বুখারী: বাবু ফাদলি সালাতিল ফাজরি ফী জামাআতিন, ৬১৪; মুসলিম: বাবু ফাদলি কাসরাতিল খুতা ইলাল মাসাজিদে, ১০৬৪)।

১১. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, একাকী নামাজ পড়ার চাইতে জামাআতে নামাজ পড়ার ফযীলত সাতাশ গুন। বেশী। (বুখারী: বাবু ফাদলি সালাতিল জামাআতি, ৬০৯; মুসলিম: বাবু ফাদলি সালাতিল জামাআতি, ১০৩৮)


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শয়তানের যাবতীয় ওয়াসওয়াসা ও কুমন্ত্রণা জাল ছিন্ন করে ইবাদতে মগ্ন-নিমগ্ন হওয়ার তাওফিক দান করুন। তাদের পেতে রাখা ঈমান বিধ্বংসী আকর্ষনীয় ও লোভনীয় বহুমাত্রিক রঙিন ফাঁদে পা না দিয়ে এবং সকল বিভ্রান্তির হাত থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে যথাসময়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।






Google Search Keyword

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হাদিস

নামাজের ফজিলত

ফজরের নামাজ সম্পর্কিত হাদিস

নামাজের গুরুত্ব  নামাজ নিয়ে উক্তি

 namaj nia hadis

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হাদিস

ফজরের নামাজ সম্পর্কিত হাদিস

সালাত সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

নামাজ সম্পর্কে ঘটনা

নামাজ না পড়ার শাস্তি হাদিস

নামাজ সম্পর্কে হাদিস

About Admin

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 Comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন